চেংনা উচ্চ বিদ্যালয় এর সহপাঠ কার্যক্রম

শিক্ষা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষা। তবে শুধুমাত্র বইয়ের জ্ঞানই একটি শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ নিশ্চিত করতে পারে না। জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি চরিত্র গঠন, সামাজিকতা, নেতৃত্বগুণ, সৃজনশীলতা, দেশপ্রেম এবং মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে সহপাঠ কার্যক্রমের ভূমিকা অপরিসীম। এ কারণে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঠক্রমের পাশাপাশি সহপাঠ কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

চেংনা উচ্চ বিদ্যালয়, যা ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, দীর্ঘ সময় ধরে কেবল একাডেমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, সহপাঠ কার্যক্রমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরিচালনা পর্ষদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বিদ্যালয়ে নিয়মিত নানা সহশিক্ষা কার্যক্রম আয়োজন করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশে অসাধারণ অবদান রাখছে।

সহপাঠ কার্যক্রমের গুরুত্ব

সহপাঠ কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা—

  1. দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা গড়ে তোলে।

  2. নেতৃত্বগুণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা অর্জন করে।

  3. দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খলার চর্চা শেখে।

  4. আত্মবিশ্বাস ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

  5. শরীর ও মনের সঠিক বিকাশ ঘটে।

  6. সমাজসেবামূলক কাজে আগ্রহী হয়।

চেংনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহপাঠ কার্যক্রম

১. ক্রীড়া কার্যক্রম

চেংনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহপাঠ কার্যক্রমের সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশ হলো ক্রীড়া। প্রতি বছর বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, বল নিক্ষেপ, দড়ি টানা, ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেটসহ নানা ইভেন্ট থাকে।

এছাড়া আন্তঃবিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও চেংনা উচ্চ বিদ্যালয় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। অনেক সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করে গৌরব বয়ে আনে। ক্রীড়া শিক্ষার্থীদের শরীরকে সুস্থ রাখে, পাশাপাশি তাদের মধ্যে দলবদ্ধতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ ঘটায়।

চেংনা-উচ্চ-বিদ্যালয়
চেংনা-উচ্চ-বিদ্যালয় ফুটবল একাদশ-২০২৫

২. সাংস্কৃতিক কার্যক্রম

চেংনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিদ্যালয়ে বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা গান, নাচ, আবৃত্তি, অভিনয়, একাঙ্ক নাটক, কৌতুক, ও বিতর্কে অংশগ্রহণ করে।

বাংলা নববর্ষ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (২১ ফেব্রুয়ারি), স্বাধীনতা দিবস (২৬ মার্চ), বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) এবং বিশ্ব শিশু দিবসসহ নানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম, সাংস্কৃতিক চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ করে।

৩. স্কাউট ও গার্লস গাইড কার্যক্রম

বিদ্যালয়ে স্কাউট ও গার্লস গাইড দল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারা নিয়মিত অনুশীলন, ক্যাম্পিং, সামাজিক সেবা কার্যক্রম, বৃক্ষরোপণ এবং দুর্যোগকালীন সহযোগিতা প্রদান করে।

স্কাউট সদস্যরা সততা, শৃঙ্খলা, সাহসিকতা এবং দেশপ্রেমের আদর্শে গড়ে ওঠে। বিভিন্ন জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করে তারা বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করছে।

৪. বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা

চেংনা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যুক্তি প্রদর্শন, সুন্দরভাবে মতামত প্রকাশ এবং অন্যের মতকে সম্মান করার অভ্যাস অর্জন করে।

এছাড়া বিজ্ঞান মেলা, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা ও কুইজ আয়োজন করা হয়। এসব প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি, কৌতূহল এবং সৃজনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে।


৫. বিজ্ঞান মেলা ও সৃজনশীল প্রদর্শনী

প্রতি বছর বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে নানা প্রকল্প উপস্থাপন করে। যেমন: সৌর শক্তি চালিত যন্ত্র, পানি পরিশোধন প্রক্রিয়া, কৃষি প্রযুক্তি, রোবোটিক্সের ক্ষুদ্র প্রয়োগ ইত্যাদি।

এছাড়া চারুকলা ও হস্তশিল্প প্রদর্শনীও আয়োজন করা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা চিত্রাঙ্কন, কারুকাজ, ক্যালিগ্রাফি, কাগজ ভাঁজ, মাটির তৈরি সামগ্রী প্রদর্শন করে। এসব কার্যক্রম তাদের নান্দনিকতা ও সৃজনশীলতা বিকশিত করে।


৬. সামাজিক সেবা কার্যক্রম

চেংনা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। যেমন:

  • বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান

  • বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ

  • রক্তদান কর্মসূচি

  • স্বাস্থ্য সচেতনতা ক্যাম্পেইন

এসব কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মানবিকতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেম জাগ্রত করে।


৭. লাইব্রেরি ও পাঠচক্র কার্যক্রম

বিদ্যালয়ে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি রয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পাঠচক্রে অংশ নেয় এবং বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। পাঠচক্রের মাধ্যমে সাহিত্য আলোচনা, বই পর্যালোচনা ও লেখালেখির দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।


৮. তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল কার্যক্রম

ডিজিটাল যুগের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বিদ্যালয়ে আইসিটি ল্যাব চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মাল্টিমিডিয়া এবং ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করছে। বিদ্যালয় পর্যায়ে আইসিটি মেলা ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।


৯. বিশেষ দিবস উদযাপন

বিদ্যালয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন করা হয়। যেমন:

  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

  • স্বাধীনতা দিবস

  • বিজয় দিবস

  • জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

  • বিশ্ব পরিবেশ দিবস

  • বিশ্ব মানবাধিকার দিবস

এসব দিবসে রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

শিক্ষক ও অভিভাবকের ভূমিকা

সহপাঠ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেন, সঠিক দিকনির্দেশনা দেন এবং প্রতিটি কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেন। অভিভাবকরাও এসব কার্যক্রমে সহযোগিতা করে থাকেন, যা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে সহায়ক হয়।

চেংনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহপাঠ কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক, নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রাখছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে সুসজ্জিত, দায়িত্বশীল, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছে।

সুতরাং বলা যায়, চেংনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহপাঠ কার্যক্রম কেবল একটি পরিপূরক শিক্ষা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি নিয়মিতভাবে এসব কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, তবে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবে।

ধন্যবান্তে-

চেংনা উচ্চ বিদ্যালয়,

কাপাসিয়া,গাজীপুর

Scroll to Top